ডাঃ আব্দুল ওয়াদুদ গোমস্তাপুর: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। শনিবার (১৩ মে) রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ। পরে রবিবার (১৪ মে) আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

ধর্ষণের দায়ে গ্রেপ্তারকৃত কিশোর সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম আলীর ছেলে ইমরান আলী (১৭)। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। গত ২৯ এপ্রিল সকালে পাশের বাড়ির এক ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী শিশু, তার পরিবার, প্রতিবেশী,স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়,গত ২৯ এপ্রিল সকালে ওই শিশুর বাসায় কেউ না থাকলে সেই সুযোগে তাকে ধর্ষণ করে ইমরান। পরে তার মা বাসায় ফিরে আসলে ঘটনা খুলে বলে শিশুটি। এসময় রক্তক্ষরণ হলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তার পরিবার ও স্থানীয়রা। এনিয়ে জানাজানি হলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় ইমরান। এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করলেও মানেনি শিশুটির পরিবার। পরে থানায় গিয়ে অভিযোগ দেয়।

আহত শিশু জানায়, সে (ইমরান) আমাকে বলে এসব কাউকে বললে তোকে মেরে ফেলব। কাউকে বলবি না। এখনও অনেক ব্যথা লাগছে।

তার মা বলেন,ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় আসলে মেয়ে বিষয়টি আমাকে অবহিত করে। পরদিন ৩০ এপ্রিল আমার এক ভাতিজা তাকে কয়েক থাপ্পর দেয়ার পর সবার সামনে সে ঘটনার কথা স্বীকার করে। এরপর ব্যথা ও রক্তপাত না কমায় ০১ মে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। এরপর হাসপাতালের ডাক্তার জানায়,আগে পুলিশকে বিষয়টি জানাতে হবে। পরে তারা কিছু ওষুধপত্র লিখে দেয়।

তিনি আরও বলেন,ঘটনার পর থেকেই ওই ছেলের বাবা ইব্রাহিম ও তার পক্ষে শফিকুল নামের এক ব্যক্তি থানায় মামলা না করতে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে। এমনকি আমাদেরকে ৬০ হাজার টাকার প্রলোভন দেখানো হয় যাতে আইনের আশ্রয় না নেই।

জানা যায়,হাসপাতালে নেয়ার আগে মেয়েটিকে স্থানীয় দুইজন গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গ্রাম্য চিকিৎসক বলেন, আমার কাছে নেয়ার সময় খুবই গুরুতর অবস্থা ছিল এবং অনবরত রক্তপাত হচ্ছিল। এ অবস্থা দেখে আমি নিজেই ঘাবড়ে যায়। তাদেরকে হাসপাতালে নেয়ার এবং পুলিশকে জানানোর পরামর্শ দেয়। আমি চিকিৎসা না করেই ফিরিয়ে পাঠায়,কারণ পরবর্তীতে আইনি বিভিন্ন জটিলতায় পড়তে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা জুলেখা বেগম জানান,মেয়ের পরিবারকে কিছু টাকা দিয়ে ঘটনার ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। এর আগেও ওই ছেলের এমন আরেকটি ঘটনা রয়েছে। মেয়েটির বাবা তার মেয়ের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বিষয়টি প্রকাশ করতে চাইনি। পরে মেয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে এরপর থানায় জানাতে বাধ্য হয়।

এবিষয়ে অভিযুক্ত ইব্রাহিমের বাড়িতে গেলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। তার দাদি বলেন,আমরা পারিবারিকভাবে সমাধান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মেয়ের পরিবার রাজি হয়নি৷ এরপর থেকেই আমার নাতি পলাতক ছিল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন জানান,কয়েকদিন ধরে আসামী আটক করার চেষ্টা করলেও পলাতক ছিল ইমরান। পরে শনিবার রাতে তাকে গ্রপ্তার করা হয়। রবিবার (১৪ মে) আদালতে সোপর্দ করলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।